ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ছাড়িয়ে চট্টগ্রামে

rohinga2অনলাইন ডেস্ক :::

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক তাণ্ডবের শিকার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা এখন কক্সবাজার জেলা ছাড়িয়ে চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও নগরে প্রবেশ করছে।

কিছুদিন ধরেই এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও গত রবিবার রাতে আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের গেটে ২০-২২ জনের একটি দল আশ্রয় নেওয়ার পর বিষয়টি নগরবাসীর নজরে আসে।

 কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া উপজেলার সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতিদিনই ৮-১০টি করে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা নাফ নদ থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানাচ্ছে। কিন্তু এর পরও জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

টেকনাফের লেদা এবং উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রতিদিনই শত শত রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিচ্ছে। এ দুই শিবির ছাড়াও অনেক পরিবার কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। তারা বাংলাদেশের জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেনি। আবার চট্টগ্রামে যেসব পরিবার চলে আসছে, তাদের হিসাবও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে থাকছে না। কারণ কক্সবাজার থেকে সড়কপথে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী কিংবা নগরে কখন কয়টি পরিবার প্রবেশ করছে, এমন হিসাব রাখার ব্যবস্থা সরকারি পর্যায়ে নেই। যাত্রীবাহী বাসে চড়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গারাও অনায়াসে চট্টগ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। কার্যত পুরো বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়তে কোনো বাধা নেই।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের এই ধরনের বাধাহীন চলাফেরার সুযোগ রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয় বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ রাখা জরুরি ছিল। এখন রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে দেশ আর্থসামাজিক সমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। ’

চট্টগ্রাম নগরে ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে—জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন গতকাল সোমবার রাতে জানান, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে চলে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রশাসন খোঁজখবর নিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা মতো প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের সামনে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে নগর পুলিশ কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে—জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর আহম বলেন, ‘গণমাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবার শাহি জামে মসজিদের গেটের সামনে অবস্থান নিয়েছে শুনে সেখানে তাত্ক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে কাউকে পায়নি। ’

নগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ হবে না শর্তে জানান, ‘রোহিঙ্গাদের মসজিদের গেটে অবস্থান’ বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেনেছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাক্ষাত্কার নেওয়ার পরপরই রাতে তাদের মসজিদের গেট থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মানবিক কারণে এসব পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আবার মসজিদের গেটে থাকতে দেওয়ারও সুযোগ ছিল না। এ কারণে কৌশলে তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’

মসজিদের সামনে আশ্রয় নেওয়া পঞ্চাশোর্ধ্ব নাছিমা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা অনুপ্রবেশের পর প্রথমে কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা যে ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে ঘুমানোর জায়গাও নেই। তাই শিশু এবং নারী-পুরুষসহ তারা ২২ জন চট্টগ্রামে চলে এসেছেন।   নাছিমা ও মো. কাসেম মংডুতে সেনাবাহিনী দ্বারা বর্বরতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের তথ্য জানান। সেখানে হত্যা, ধর্ষণ এবং ঘর পোড়ানোসহ নানা অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন তাঁরা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, সরকার স্রোতের মতো রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে দেবে না।

পাঠকের মতামত: